শিক্ষাব্যবস্থার দুষ্টচক্রে আত্মহত্যা করছে শিক্ষার্থীরা!

গতকাল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের চব্বিশঘণ্টা পার হওয়ার আগেই অকৃতকার্য ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে ফেলেছে!

বাংলাদেশে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যেকোনো পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলেই দেখা যায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। কেন ঘটছে এরকম অপ্রত্যাশিত আত্মহত্যা?

যাত্রাপালার নর্তকী ভোট ডাকাতি করে এমপি হয়ে গেলে যে দেশের বিসিএস ক্যাডার ম্যাডাম ম্যাডাম বলে স্যালুট করতে হয়, সেই দেশের শিক্ষার্থীরা কেন এসএসসি/এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করবে?

যে দেশে কোটি-কোটি গ্রাজুয়েট-যুবক পাবলিক/জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মর্যাদাপূর্ণভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও বছরের পর বছর চাকরি না পেয়ে বেকার জীবনযাপন করে, সেই দেশের শিক্ষার্থীরা কেন পরীক্ষায় ফেল করে নিজের জীবন ধ্বংস করে দেবে?

এই দেশের শিক্ষা কি এতোই মূল্যবান হয়ে গেল যে পরীক্ষায় ফেল করলে নিজের জান কুরবান করে ফেলতে হবে? কোন দুষ্টচক্রে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, তাহা শীঘ্রই পর্যালোচনা হওয়া দরকার।

দেশ স্বাধীন হলেও আমাদের গলায় এখনো গোলামীর জিঞ্জির রয়ে গেছে। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা আজও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে রাখা হয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থায় নেই কর্মমুখী দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ, যে শিক্ষাব্যবস্থায় নেই নৈতিক শিক্ষার নূন্যতম কোন বালাই।

বাংলাদেশে শিক্ষিত হওয়া মানেই পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়া! যেকোনো মূল্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া!! এই কারণেই প্রতিটি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া অনেকটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। আর এ উদ্দেশ্যেই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে যেকোনোভাবে পাশ করতে চায় শিক্ষার্থীরা।

জ্ঞানার্জন করা, অজানাকে জানা, নিজেকে সমৃদ্ধ করা এখানে শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী দক্ষতা, গবেষণা-পর্যালোচনার এই দেশে কোন মূল্য নেই। এদেশে শিক্ষা মানে নকল করে হোক বা যেভাবেই হোক এসএসসি/এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের চামচামি করা!

শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে সুকৌশলে সীমিত করে দেয়ার পরিণাম আজ দেশের সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক লাঞ্চনা, যৌন হয়রানি ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদকের ছড়াছড়ি এখন বাংলাদেশের নির্মম বাস্তবতা।

এরকম একটি ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থার কারণে আর একজন শিক্ষার্থীও যেন আত্মহত্যা না করে সেই উদ্যোগ এখনি নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে নিজের প্রতি এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে হবে। ভয়কে জয় করা শেখাতে হবে। পরীক্ষায় পাশের চেয়েও জীবনের মূল্য অনেক বেশি এই ভরসা দিতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। আসুন নিজেরা সচেতন হই, সোচ্চার হই। আদর্শহীন শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দুর্বার জনমত গড়ে তুলি।

এই নীতি-নৈতিকতাহীন প্রচলিত সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার কারণে যেন ঝরে না যায় আর একটিও প্রাণ।

লেখক-

কেন্দ্রীয় সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস