আপনাদের মাঝে এমন বিশেষ কী গুণ আছে যা একজন ছাত্রকে অন্য ইসলামী সংগঠন বা সেক্যুলার সংগঠন না করে ইসলামী ছাত্র মজলিস করতে উদ্বুদ্ধ করবে ?

প্রশ্নটি করেছেন : আলমগীর মাহমুদ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, নোয়াখালী থেকে

উত্তর: ধন্যবাদ ভাই আপনাকে প্রশ্নটি করার জন্য। আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমত আমরা বলবো, অন্য কোন ইসলামী ছাত্র সংগঠনের কর্মীদেরকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস তার দলে ভিড়ানোর জন্য কাজ করে না। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যারাই করছেন তারা সকলেই একে অপরের সহযোগী-সহযাত্রী। আমরা নিজেদেরকে একমাত্র হক্ব বা সত্য মনে করি না। অন্য সংগঠনের সাথে হয়তো কর্মসূচি-কর্মপদ্ধতির ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু দিন শেষে আমরা সবাই দ্বীনের বিজয় চাই, আল্লাহর সন্তুষ্টিই চাই । আমরাতো এই আয়াতেরই অনুসরণ করছি:

ﺳَﺎﺑِﻘُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰٰ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٍ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺟَﻨَّﺔٍ ﻋَﺮْﺿُﻬَﺎ ﻛَﻌَﺮْﺽِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ

অর্থ্যাৎ, দৌঁড়াও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো, তোমার রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মত ৷ তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে – (সুরা আল হাদীদ-২১ )

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের দাওয়াতের প্রধান টার্গেট হচ্ছে সাধারণ ছাত্র সমাজ যাদের কাছে এখনও দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত পৌঁছেনি। ইসলামের সৌন্দর্য্য যথার্থ প্রস্ফুটিত না হওয়ার কারণে যারা ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে সেসব ছাত্রভাইদেরকে দাওয়াত পৌঁছানো ছাত্র মজলিসের প্রধান টার্গেট। তাছাড়া যেসব ছাত্র ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনের চেষ্টা করে কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গাফেল তাদেরকেও ছাত্র মজলিস দাওয়াতের টার্গেট রেখেছে।

একজন ছাত্র যেসব কারণে ছাত্র মজলিসের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে তার কয়েকটি কারণ নিম্নে বর্ণনা করছি :

  • ছাত্র মজলিসের কর্মীরা কাজ করেন আল্লাহর সন্তোষ অর্জন ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে।
  • ছাত্র মজলিসের মৌলনীতি হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শ অনুসরণ।
  • ছাত্র মজলিস ব্যক্তিজীবনের পরিশুদ্ধিকে প্রাধান্য দেয়।
  • ছাত্র মজলিস ইসলামী শক্তিগুলোর ঐক্য প্রত্যাশা করে এবং ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে এমন কথা ও কাজ থেকে তার সকল জনশক্তিকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।
  • সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে ঘূণেধরা ও জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তনে কাজ করছে ছাত্র মজলিস।
  • ছাত্র মজলিস কর্মীদেরকে সর্বোচ্চ নৈতিক চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। ন্যুনতম অনৈতিকতার সাথে জড়িত কেউ ছাত্র মজলিসে থাকতে পারে না
  • ছাত্র মজলিস কর্মীদের প্রতিষ্ঠানিক পড়াশোনাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় এবং তত্ত্বাবধান করে।
  • পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি ইসলাম ও সাধারণ জ্ঞানে পারদর্শী করে তোলে।
  • ছাত্রদেরকে সমাজের আগামী দিনের একজন সংগঠক ও নেতা হিসেবে তৈরি করে।
  • ছাত্র মজলিস ইসলামী আদর্শের আলোকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের আন্দোলন করছে।
  • ইসলাম ও দেশ রক্ষার যে কোন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ছাত্র মজলিস স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে এবং নেতৃত্ব দেয়।
  • ছাত্র মজলিস স্কুল, কলেজ, আলীয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় সমানভাবে কাজ করে। ছাত্র মজলিস বহুধারায় বিভক্ত জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ছাত্রদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমে আনার কাজ করছে।
  • ছাত্র মজলিস ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অসহায় ছাত্রদের পাশে সর্বদা থাকে।
  • শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হল দখল বা সিট কুক্ষিগত করে রাখা, টেন্ডারবাজি প্রভৃতি অপকর্মের সাথে ছাত্র মজলিসের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই।
  • অন্য কোন ইসলামী ছাত্র সংগঠন তো দূরের কথা সেক্যুলার কোন ছাত্র সংগঠন বা এর নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত কোন বিষয়ের প্রতি উপহাস, স্ল্যাজিং, অবজ্ঞা ও ঠাট্টা প্রভৃতি মানসিক নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড করতে ছাত্র মজলিস তার কর্মীদেরকে ঘূর্ণাক্ষরেও প্রশ্রয় দেয় না।
  • কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতৃত্ব পুনর্গঠন ছাত্র মজলিসের নিজস্ব সংবিধানের আলোকে পরিচালিত হয়। জাতীয় সংগঠন কিংবা বাইরের কোন শক্তির এখানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ফলে ছাত্ররা স্বাধীনভাবে তাদের নিজেদের নেতৃত্ব নিজেরাই তৈরি করতে পারে। যার কারণে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব, গ্রুপিং, লবিং কিংবা লেজুড়বৃত্তিতার পরিবর্তে এখানে সহজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত থাকে।
  • ছাত্র মজলিসের আয়ের প্রধান উৎস নিজস্ব জনশক্তির ব্যক্তিগত অর্থ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদান।
  • ছাত্র মজলিস কর্মীদের স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে ব্লাড গ্রুপিং ও ডোনেশন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি প্রভৃতি শাখা পর্যায়ে নিয়মিত পালন করে।