বাংলাদেশে আরো অনেক ইসলামী সংগঠন থাকতে ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা কি ছিলো? সে প্রয়োজন ছাত্র মজলিস কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে?

প্রশ্নটি করেছেন : মুহাম্মাদ রাশিদুর রহমান, মা’হাদুশ শাইখ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ., ঢাকা থেকে

উত্তর: ধন্যবাদ ভাই আপনাকে প্রশ্নটি করার জন্য। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠালাভ করে ১৯৯০ সালের ৫ জানুয়ারি। সে সময়ে মাত্র হাতেগোনা দু’একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠন এদেশের ময়দানে কাজ করছিল। তদুপরি সে সংগঠনগুলোর বিচরণ ছিল শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধারার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক। যা ইসলামী আন্দোলনের সার্বজনীনতা যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছিল। তাছাড়াও দৃষ্টিভঙ্গি ও আমলগত কিছু ত্রুটিও সেসব ছাত্র সংগঠনগুলোর জনশক্তিদের মাঝে বিরাজমান ছিল। যা আদর্শিক কোন আন্দোলনকে সহজেই প্রশ্নবিদ্ধ করতো।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুল, কলেজ ও আলীয়া মাদ্রাসায় যেমন সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তেমনি কওমী মাদ্রাসাগুলোতেও সমানভাবে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অর্থ্যাৎ বহুধা বিভক্ত জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ছাত্রদের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যাপক প্রসিদ্ধি অর্জন করে। ছাত্র মজলিসের প্রাথমিক শাখা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত যে কোন কমিটিতেই স্কুল-কলেজ, আলীয়া ও কওমী মাদ্রাসার জনশক্তির সম্মিলিত উপস্থিতি আপনি দেখতে পাবেন।

একদেশদর্শীতা বা দলীয় অন্ধ আনুগত্য মানুষকে চরমপন্থার দিকে ধাবিত করে। অর্থ্যাৎ একমাত্র আমার দলই সত্য বা আমার নেতারা যা বলেন তাই সত্য-এর বাইরে আর কিছু নাই, এমন চিন্তা-চেতনা লালনকারী ব্যক্তি কখনো অন্য দল বা মতাদর্শের ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন না। ফলে সর্বদা কাদা ছোড়াছুড়ি, গালাগালি এমনকি মারামারি পর্যন্ত সংঘটিত হতে দেখা যায়। যা ইসলামী আন্দোলন ও বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের অন্যতম অন্তরায় এবং বড় ধরণের গুনাহের কাজ। সুতরাং আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ স. নির্দেশিত মধ্যমপন্থাই সর্বাবস্থায় অনুসরণ করতে হবে। অর্থ্যাৎ বাড়াবাড়িও নয়, অতিরিক্ত ছাড়াছাড়িও নয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সর্বাবস্থায় সেই মধ্যমপন্থার নীতিই অনুসরণ করে থাকে। আমাদের সকল জনশক্তিকে শেখানো হয় ভিন্নমতাবলম্বী বা ভিন্ন দল অনুসরণকারীদের প্রতি সদাচরণ ও সম্মান প্রদর্শন করতে। শেখানো হয় নিজেদের মধ্যে ফেতনা বা বিভক্তি উস্কে দেয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে। ন্যুনতম ঈমান আছে এমন কোন মুসলমানকেই আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শত্রু বা প্রতিবন্ধক মনে করি না। আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি প্রতিষ্ঠিত তাগুত তথা সেক্যুলার ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী। সুতরাং আমরা মনে করি ইসলামী শক্তির মধ্যে দূরত্ব ঘোচানোর ক্ষেত্রে ছাত্র মজলিসের এই পদক্ষেপ যথার্থ সফল হয়েছে এবং সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের স্লোগান নিয়ে। আমরা ধ্বসে পড়া প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তন চাই। এ জন্য দরকার ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান ও যুগ চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষত, সুশৃঙ্খল একদল জনশক্তির উপস্থিতি। সে জনশক্তি তৈরিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ছাত্র মজলিস।