আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জ্ঞান অর্জন, চরিত্র গঠন ও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের প্রতিশ্রুত সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯০ সালের ৫ জানুয়ারি। এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে সেদিন বন্ধুর পথচলা শুরু করে এই সংগঠন। প্রতিষ্ঠার বছরই সারাদেশের উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, আলীয়া মাদ্রাসা ও কওমী মাদ্রাসায় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় ছাত্র মজলিস। ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই সংগঠনের আহ্বান। স্বল্প সময়ে ত্রি-ধারায় বিভক্ত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ছাত্রদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম হিসেবে জাতির আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস। বিশ্বজাহানের সুমহান প্রতিপালকের ইচ্ছায় দেশের সন্ত্রাসমুক্ত বৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটি তার বন্ধুর পথচলা আজও অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তা’য়ালার সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। অনুপম গঠনশৈলী এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দিয়ে আল্লাহ মানুষকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধির মর্যাদায় অভিষিক্ত করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যুগে যুগে নবী-রাসুল ও তাঁর অবতীর্ণ কিতাবের মাধ্যমে বাতলে দিয়েছেন জীবন যাপনের সঠিক পদ্ধতি-প্রকৃত কল্যাণ-অকল্যাণ ও সফলতার সরল পথ-সিরাতুল মুস্তাকীম। হযরত মুহাম্মদ স. হচ্ছেন এ ধারার সর্বশেষ নবী। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হচ্ছে মানবজাতির পথ চলার বিশুদ্ধতম আলোকবর্তিকা। আল্লাহ জোর করে মানুষের উপর তাঁর বিধান চাপিয়ে দিতে চান না। তিনি দেখতে চান মানুষ নিজের ইচ্ছায় এই শান্তির পথ বেছে নেয় কিনা। ইতিহাস বলছে মানুষ যখন তার এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আল্লাহর পথ থেকে সরে গেছে, তখনই জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ-সঠিক ধারণা ও দায়িত্বানুভূতির অভাবই সকল সংকটের মূল কারণ।

আল্লাহ তা’য়ালাই এই সমগ্র বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও প্রভু। নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র তিনিই। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা-’সৃষ্টি তাঁর বিধানও তাঁরই’। তাই সকল প্রকার আনুগত্য ও দাসত্ব পরিহার করে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশের অনুববর্তী হওয়া এবং তদনুসারে জীবন ও সমাজ গঠনের মধ্যেই প্রকৃত সাফল্য ও মুক্তি নিহিত। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ এ দাওয়াত নিয়েই এসেছিলেন।

আরেকটি মহাসত্যের দিকে নবী-রাসূলগণ আহ্বান জানিয়েছেন মানুষকে। এ জীবনই মানুষের শেষ নয়। মৃত্যুর পর তাকে প্রবেশ করতে হবে আখেরাতের অনন্ত জীবনে। পার্থিব জীবন একটা ক্ষণস্থায়ী পরীক্ষাগার মাত্র। জীবনের সমগ্র কাজ-কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে আখেরাতে। এর আলোকেই নির্ধারিত হবে মানুষের শেষ পরিণতি জান্নাত অথবা জাহান্নাম। দুনিয়ার জীবনকে আল-কুরআনের পথে পরিচালিত করলেই জান্নাতে অনন্ত সুখের অধিকারী হওয়া যাবে। নতুবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেক ধ্রুবসত্য-জাহান্নাম। বলাবাহুল্য, আখেরাতের সফলতা লাভের উদ্দেশ্যেই আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত ও নিয়োজিত করতে হবে। বস্তুত পরকালে জবাবদিহির মানসিকতার অনুপস্থিতিই একজন মানুষকে ক্রমান্বয়ে অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারিতার পথে ঠেলে দেয়।

মুসলমান কোনো ব্যক্তি বিশেষের নাম নয়। ব্যক্তি জীবনে একাকী শুধু মুসলমান থাকাও যায় না। তাগুত ও জাহেলিয়াতে পরিপূর্ণ সমাজ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। তাই এ সমাজকে ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজানো প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য। এর জন্য প্রয়োজন একটা পূর্ণাঙ্গ বিপ্লব।

কিন্তু এ মহান কাজ যেমন বিচ্ছিন্নভাবে করা সম্ভব নয়, তেমনি শুধু ব্যক্তির আন্তরিকতা এর জন্য যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সক্রিয় প্রচেষ্টা ও একটা সুসংবদ্ধ আন্দোলনের। মুসলমানদেরকে তাই সংগঠিত হতে হবে। সংঘবদ্ধতা মুসলিম জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে দুনিয়াতে ন্যায়নীতির প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করা। নবী-রাসূলগণ যুগে যুগে এ কাজেরই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে সেই শাশ্বত আন্দোলনের গতিধারাকে অব্যাহত রাখার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ‘উম্মতে মুহাম্মদী’র উপর। সেই দ্বীনি দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার উদ্দেশ্যেই জ্ঞান অর্জন, চরিত্র গঠন ও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জিহাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে ১৯৯০ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এদেশের তরুণ ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস।

এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধি, সমাজব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ লাভ এবং এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে আল্লাহর সন্তোষ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন।

সার্বিক বিষয়ে আল-কুরআন, রাসুল স. এর সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ

দাওয়াত : ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য্য তুলে ধরা, তাদের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানর্জনে উৎসাহ সৃষ্টি এবং ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা

সংগঠন : যেসব ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিতে আগ্রহী তাদেরকে এই সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা

প্রশিক্ষণ : এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান, সে অনুযায়ী চরিত্র গঠন এবং মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ সাধনের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ

আন্দোলন : ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, ছাত্র সমাজের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন এবং শোষন, জুলুম, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় থেকে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো

প্রাথমিক সদস্য : যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের আদর্শ ও কর্মসূচির সমর্থন করেন এবং সংগঠনে যোগদান করেন এবং সংগঠনের নির্ধারিত প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করেন তবে তিনি এই সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

কর্মী : যে সকল শিক্ষার্থী এ সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিতে একমত হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন এবং সক্রিয়ভাবে দাওয়াতি কাজ করেন, সংগঠনের সভাসমূহে নিয়মিত যোগদান করেন, বায়তুলমালে এয়ানত দেন ও ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখেন তারাই কর্মী।

সহযোগী সদস্য : যদি কোন ছাত্র সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মৌল কর্মনীতির সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন, এই সংগঠনের কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালীর সাথে সাচেতনভাবে একমত হন, ইসলামের আবশ্যকীয় কর্তব্যসমূহ পালন করেন এবং সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তাহলে তিনি এই সংগঠনের সহযোগী সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন।

সদস্য : যদি কোন ছাত্র ইসলামী নীতিমালার আলোকে নিজের জীবন গঠন এবং সমাজে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন, এই সংগঠনের কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালীর সাথে পূর্ণ ঐকমত্য পোষণ করেন, এই সংগঠনের সংবিধানকে সম্পূর্ণরূপে মেনে চলেন, তার জীবনে ইসলাম নির্ধারিত মৌলিক বিধানসমূহ যথাযথভাবে পালন করেন, কবীরা গুনাহসমূহ থেকে দূরে থাকেন এবং সংগঠনের আদর্শ, কর্মসূচি ও কর্মপন্থার বিপরীত কোনো সংস্থার সাথে সম্পর্ক না রাখেন, তাহলে তিনি এই সংগঠনের সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন।

  • ছাত্র সমস্যা সমাধানের দাবিতে সংগ্রাম
  • স্টাইপেন্ড প্রদান
  • লজিং সংগ্রহ
  • টিউশনি সংগ্রহ
  • ল্যান্ডিং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা
  • ফ্রি কোচিং ক্লাস
  • ভর্তি গাইড প্রকাশ
  • ভর্তি পরীক্ষার মডেল টেস্ট গ্রহণ
  • ভর্তিকালীন সহযোগিতা
  • প্রশ্নপত্র
  • সাজেশন
  • নোট বিলি
  • আবাসন ব্যবস্থা
  • রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এবং
  • ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের ১৩ দফা শিক্ষাদাবী

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ১৯৯২ সালে ২৯ মে ঢাকায় এক কলেজ প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস জাতির সামনে ১৩ দফা শিক্ষাদাবী পেশ করে। ছাত্র মজলিসের দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করেন জাতীয় শিক্ষাবিদসহ দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। পরবর্তিতে কিছু দাবি বিভিন্ন সময়ে বাস্তবায়িত হওয়ায় ২০১৪ সালে তা পরিমার্জন করা হয়। নিম্নে সে দাবিগুলো তুলে ধরা হলো :
  • ১। শিক্ষাব্যবস্থার সকল স্তরে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে
  • ২। আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির উপযোগী গণমুখী, সার্বজনীন ও ইসলামী শিক্ষা চাই
  • ৩। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ মেয়েদের জন্য আলাদা শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে
  • ৪। আবাসিক সংকট নিরসনসহ সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই
  • ৫। সেশনজট নিরসন, নিয়োগ ও সকল পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধ এবং মেধার মূল্যায়ন করতে হবে
  • ৬। গরীব ছাত্রদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ চালু করতে হবে
  • ৭। কাগজ, কলম, বইসহ শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে হবে
  • ৮। প্রতি থানায় একটি করে সরকারি কলেজ ও প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে
  • ৯। মেয়েদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ চাই
  • ১০। সকল যানবাহনে ছাত্রদের জন্য কনসেশন চাই
  • ১১। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর চলবে না
  • ১২। কওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করতে হবে (২০১৭ সালে বাস্তবায়িত হয়েছে)
  • ১৩। বেসরকারি শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে